ডাব ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি ডেঙ্গু রোগীরা
সারা দেশে জ্যামিতিক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের জন্য সাধারণত চিকিৎসকরা পর্যাপ্ত তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। বিশেষ করে ডাব রোগীদের জন্য খুবই কার্যকরী খাবার। হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাধীন রোগীরা তরল খাবার ডাব ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। প্রতিটি ডাব মান ভেদে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মুগদা জেনারেল হাসপাতাল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালে প্রধান ফটকের সামনে থেকে একাধিক ভ্রাম্যমাণ ডাবের দোকান। প্রতিটি ডাবের দোকানের ক্রেতা হাসপাতালের রোগীরা, বিশেষ করে যারা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছেন তাদের স্বজনরা। বিক্রেতারা যে দামই হাঁকছেন ডেঙ্গু রোগীর জন্য সে দামেই ডাব কিনতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
ডাব ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, ডেঙ্গু রোগী বাড়ায় ডাবের চাহিদা বেশি। সেই তুলনায় সরবরাহ না থাকায় বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের জন্য ডাক্তাররা রোগীদেরকে ডাব খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন, কারণ ডাবে পটাশিয়াম আছে। কিন্তু ডেঙ্গু কারণে ডাবের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সুযোগ নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
ডাবের এমন অতিরিক্ত দামের বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খানের নজরে আনলে তিনি বলেন, বর্তমানে জাতীয় বিষয় হচ্ছে খাদ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা। যেহেতু ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়ছে, সেই সাথে ডাবের দাম বাড়ার অভিযোগ এসেছে। এই বিষয়ে আমরা শীঘ্রই অভিযান পরিচালনা করবো।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন ডেঙ্গু আক্রান্ত স্বামী।
হাসপাতালের গেটের পাশ থেকে ডাব কিনে স্বামীকে খাওয়াচ্ছেন রুবিনা আক্তার।
তিনি বলেন, ১৭০ টাকা দিয়ে একটা ছোট ডাব কিনেছি, যার দাম বেশি হলে ৮০ থেকে
৯০ টাকা হওয়া উচিত। হাসপাতালের পাশে হওয়ায় তারা দাম বেশি নিচ্ছে।
রুবিনা আক্তারের অভিযোগ, দাম যতই হোক, রোগীর জন্য ডাব তো কিনতেই হবে। সুযোগ কাজে লাগিয়ে মানুষের পকেট কাটছে এরা।
প্রতিদিন ডাবের পানি পান করেন এমন একজন আব্দুল খালেক। তিনি বলেন, বড়
সাইজের একটি ডাব তিন-চার বছর আগে ৫০ টাকা ছিল। এরমধ্যে প্রায় তিনগুণ দাম
বেড়েছে। তিনি বলেন, অসুখের কারণে আমার মতো যাদের প্রতিদিন ডাব খেতে হচ্ছে
তারা খুব অসুবিধায় আছি। এখন সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে সব কিছু।
সাজ্জাদুর
নামের এক ডেঙ্গু রোগীর স্বজন মুগদা হাসপাতালের সামনে বলছিলেন, ডাব কিনতেই
চিকিৎসার মতো বড় ব্যয় হচ্ছে। যা সবার জন্য বহন করা সম্ভব নয়। মজিদ মোল্লা
নামের এক বিক্রেতা বলেন, আজকে প্রতি একশ ডাব কিনেছি সাড়ে ১৪ হাজার টাকায়।
অর্থাৎ গড়ে ১৪৫ টাকা একেকটি। এরমধ্যে সব আবার এক আকারের হয় না। ছোটগুলো ১৫০
টাকার নিচে বিক্রি করতে হয়। সেজন্য বড়গুলো ১৭০ টাকার নিচে বিক্রি করা
যাচ্ছে না।
এদিকে চলতি বছর শেষ হতে আরও দুই মাসের বেশি সময় বাকি। এরই মধ্যে দেশে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগী ৫৩ হাজার ১৯৬ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। একই সময়ে এডিস মশাবাহিত এই রোগে প্রাণ নিয়েছে ২৬৪ জনের।
0 coment rios: