এবার নেতানিয়াহুর বাড়িতে ড্রোন হামলা হিজবুল্লাহর!
যুদ্ধক্ষেত্রে হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃত্যু ও এর আগে আহত অবস্থায় তিনি একটি ইসরাইলি ড্রোনকে যেভাবে লাঠি দিয়ে মারার চেষ্টা করেছিলেন, গাজাবাসীরা একে বীরত্বপূর্ণ মৃত্যু বলে মনে করছে। তারা বলছে, এটি একটি দৃষ্টান্ত যে ‘কীভাবে বীরদের মৃত্যু হয়’। অন্যদের জন্য, এটি ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি উদাহরণ।
সিনওয়ার, ইসরাইলে হামাসের প্রাণঘাতী ৭ অক্টোবর, ২০২৩-হামলার পরিকল্পনাকারী, বুধবার ইসরাইলি বাহিনীর সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন এবং বৃহস্পতিবার তার মৃত্যুর কথা ঘোষণা করা হয়। তার কিছু শেষ মিনিটের একটি ভিডিওতে, তাকে একটি বোমা-বিধ্বস্ত অ্যাপার্টমেন্টে মুখ ঢাকা এবং আহত অবস্থায় একটি সোফায় বসে থাকতে দেখা যায়। এ সময় তিনি ভিডিও ধারণকারী ইসরাইলি ড্রোনের দিকে একটি লাঠি নিক্ষেপ করার চেষ্টা করেন যার জন্য ফিলিস্তিনিরা গর্বিত বোধ করছেন। সিনওয়ারের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে হামাসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘তিনি একজন বীরের মতো মৃত্যুবরণ করেছেন, আক্রমণের মুখে পালিয়ে না গিয়ে, তার রাইফেলটি ধরেছিলেন এবং দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিলেন।’ বিবৃতিতে, হামাস অঙ্গীকার করেছিল যে, তার মৃত্যু কেবল আন্দোলনকে শক্তিশালী করবে, যোগ করে যে, তারা ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানোর শর্তের সাথে আপস করবে না।
গাজার বাসিন্দা ও দুই সন্তানের বাবা ৬০ বছর বয়সী আদেল রজব বলেছেন, ‘সে একটি সামরিক ভেস্ট পরে মারা গিয়েছিল, একটি রাইফেল এবং গ্রেনেডের দিয়ে লড়াই করে, এবং যখন সে আহত হয়েছিল এবং রক্তপাত হচ্ছিল তখন সে লাঠি দিয়ে যুদ্ধ করেছিল।’ ‘গত রাত থেকে আমি ভিডিওটি ৩০ বার দেখেছি, মারা যাওয়ার জন্য এর চেয়ে ভাল উপায় আর নেই,’ গাজার ৩০ বছর বয়সী ট্যাক্সি ড্রাইভার আলী বলেছেন। ‘আমি এই ভিডিওটি ভবিষ্যতে আমার ছেলেদের এবং আমার নাতিদের জন্য দেখার জন্য প্রতিদিনের কর্তব্য করে তুলব,’ বলেছেন দুই সন্তানের বাবা। পূর্ববর্তী যে বক্তৃতায় সিনওয়ার নিজের মুখে বলেছিলেন যে, হার্ট অ্যাটাক বা গাড়ি দুর্ঘটনার চেয়ে তিনি ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে করতে মারা যেতে চান, সেই বক্তৃতার ভিডিও ফিলিস্তিনিরা অনলাইনে বারবার শেয়ার করেছে।
এবার নেতানিয়াহুর বাড়িতে ড্রোন হামলা হিজবুল্লার : ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বাড়িতে ড্রোন হামলা হিজবুল্লার। ইসরাইলের সংবাদ মাধ্যম সূত্রের খবর, শনিবার সকালে ব্যাপক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায় সিজারিয়া এলাকায়। এখানেই রয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন। ইসরাইল সেনার তরফে জানা গিয়েছে, লেবানন থেকে লঞ্চ করা হয়েছিল এই ড্রোন। যা একটি বাড়িতে আছড়ে পড়ে। যদিও এই হামলায় হতাহতের কোনও খবর পাওয়া যায়নি। জেরুজালেন পোস্ট সূত্রের খবর, সিজারিয়ায় এই ড্রোন হামলার পর তেল আভিবে সাইরেনের শব্দ শোনা যায়।
গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলতে থাকা ইসরাইল ও হামাস যুদ্ধ এখন মোড় ঘুরেছে ইরান ও লেবাননের দিকে। ইসরাইলের হামলায় মৃত্যু হয়েছে, হামাস প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার। হামলা ও পালটা হামলায় রক্তাক্ত মধ্যপ্রাচ্য। এরই মাঝে যুদ্ধ থামাতে দুটি শর্ত দিয়েছিলেন বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। এক্স হ্যান্ডেলে তিনি বার্তা দেন, ‘যুদ্ধ আগামিকালই শেষ হয়ে যেতে পারে। যদি হামাস তাদের অস্ত্র নামিয়ে রাখে এবং আমাদের পণবন্দিদের ফিরিয়ে দেয়।’ তবে সিনওয়ার মৃত্যুতে হামাস ও হিজবুল্লা হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, ‘যুদ্ধের নতুন অধ্যায় শুরু হবে।’ কূটনৈতিক মহলের দাবি, নেতানিয়াহুর বাড়িতে হামলা চালিয়েই সূচনা করা হল সেই নতুন অধ্যায়ের। এই হামলার ঘটনায় স্পষ্ট যে যুদ্ধ বিরাম নয়, বরং আরও রক্ত স্রোত বইতে চলেছে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে।
এদিকে আরও জানা যাচ্ছে, শনিবার সকাল থেকে তিবেরিয়া ও ইসরাইলের আশপাশের এলাকা লক্ষ্য করে একাধিক ড্রোন ও রকেট হামলা চালিয়েছে হিজবুল্লা। যদিও সেই সব হামলা রুখে দেয়া হয়েছে ইসরাইলের তরফে। তেল আবিব এবং শহরের উত্তরাঞ্চলে ড্রোন হামলার সতর্কতা সাইরেনও শোনা যায়। যদিও সেখানে কোনো বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়নি। আইডিএফ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, লেবানন থেকে তিনটি ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে। যার মধ্যে দুটিকে ধ্বংস করা গেলেও একটি সিজারিয়া এলাকায় একটি ভবনে বিস্ফোরণ ঘটায়। এই হামলায় হতাহতের কোনও ঘটনা ঘটেনি।
গাজায় নিহত আরও ৩৩ ফিলিস্তিনি : অবরুদ্ধ গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর হামলা থেমে নেই। হামাস প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে হত্যার পরও চলছে ইসরাইলি বর্বরতা। বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নিষ্ঠুর হামলা অব্যাহত রেখেছে দখলদার সেনারা। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রাণলায় জানিয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় উত্তর গাজা উপত্যকার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি বিমান হামলায় অন্তত ৩৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ২১ জন নারী ছিলেন এবং ধ্বংসস্তূপ ও ভবনের নিচে আটকে পড়া অনেকের কারণে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৫০ হতে পারে। বোমা বিস্ফোরণে ৮৫ জনেরও বেশি লোক আহত হয়েছে, যাদের মধ্যে কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছে। সূত্র : রয়টার্স, আল-জাজিরা।
0 coment rios: