সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৪

ক্ষুধা লাগলে যে কারণে মেজাজ খিটখিটে থাকে

ক্ষুধা লাগলে যে কারণে মেজাজ খিটখিটে থাকে

 

ক্ষুধার্ত অবস্থায় আমাদের মধ্যে ক্লান্তি, বিভ্রান্তি বা রাগের মতো আবেগগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে। আর এসব কিছুর জন্য দায়ী হলো চিনি-বিশেষত গ্লুকোজ, যা আমাদের রক্তে সঞ্চালিত হয়। যখন এর মাত্রা কমে যায়, তখন আমাদের শরীর তা পুনরুদ্ধারে ধারাবাহিক কিছু প্রতিক্রিয়া দেখায়।

কিন্তু গ্লুকোজ ঠিক কী ভূমিকা পালন করে? এটি কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

এই ধরনের চিনি আমাদের অঙ্গ তৈরি করা কোষের শক্তির প্রধান উৎস। উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, এর ওপর মস্তিষ্ক প্রায় একচেটিয়াভাবে নির্ভর করে। এটা ছাড়া মস্তিষ্ক তৈরি করা ১০০ বিলিয়ন স্নায়ু কোষ নিজেদের কাজ ভালোভাবে করতে পারবে না।

দুর্বল ও খিটখিটে বোধ করা, মাথা ঘোরা এবং মনোযোগে অসুবিধার মতো বিষয়গুলো দিয়ে বোঝা যায় যে মস্তিষ্ক পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্লুকোজ পাচ্ছে না। আর এই মাত্রা অনেক বেশি বেড়ে গেলে অর্থাৎ খুব দীর্ঘ সময়ের জন্য চিনি সরবরাহে ঘাটতি হলে মানুষ কোমাতেও চলে যেতে পারে।

আবেগ পরিচালনাকারী কর্টিসল

কিছু লক্ষণ আছে যা রক্তে শর্করার মাত্রা ফিরিয়ে আনতে আমাদের যে খেতে হবে, সেই সংকেত প্রদান করে থাকে এবং বিভিন্ন পুষ্টির গন্তব্য অর্থাৎ আমাদের শরীর জুড়ে ছড়িয়ে থাকা কোষে পৌঁছানোর মহাসড়ক হয়ে কাজ করে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে ধারাবাহিকভাবে বেশকিছু মনস্তাত্ত্বিক প্রতিক্রিয়া ঘটে।

মলিকিউলার পর্যায়ে বিভিন্ন হরমোন নিঃসৃত হয়। এগুলোর একটি ঘ্রেলিন, যা পাকস্থলীর কোষ থেকে উৎপাদিত হয়ে হজমের প্রক্রিয়ায় কাজ করে। এই প্রাকৃতিক যৌগ ক্ষুধার অনুভূতি সৃষ্টি করে এবং খাবার গ্রহণের মাধ্যমে শরীর শক্তি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে।

কিন্তু আমরা কেন খাচ্ছি না সেই পরিস্থিতি না জেনেই ঘ্রেলিন সমান্তরালেই পরোক্ষভাবে অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি দ্বারা উৎপাদিত চাপ সৃষ্টিকারী কর্টিসলকে উদ্দীপিত করে।


রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে কর্টিসল গ্লুকোনোজেনেসিস নামে পরিচিত একটি প্রক্রিয়া সৃষ্টি করে। এটি লিভারে সঞ্চিত ফ্যাটি অ্যাসিড এবং প্রোটিনের ভাঙ্গন থেকে গ্লুকোজ উৎপাদনের উপর নির্ভর করে এবং দ্রুততার সঙ্গে আমাদের শরীরে শক্তি সরবরাহ করে।

ক্ষুধার্ত অবস্থায় রক্তে কর্টিসলের উপস্থিতি মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে, অনেকটা পুতুলের মতো খেলায়। এটি ইতিবাচক আবেগ এবং চাপের উপলব্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত ডোপামিন এবং সেরোটোনিনের মতো নিউরোট্রান্সমিটারের মাত্রা পরিবর্তন করে। এই সম্মিলিত প্রভাবের ফলেই ক্ষুধার্ত থাকা অবস্থায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বিরক্ত বা রাগ লাগে।

কেবল মানুষের ক্ষেত্রেই এমন হয় না। জেব্রাফিশের আচরণ নিয়ে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, ক্ষুধার্ত বোধ করলে এই প্রাণীগুলোও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে।

বিবর্তনের কারণে পরিবর্তিত আচরণ

যেমনটি আমরা দেখেছি, আমাদের মেজাজ অনেক জৈব রাসায়নিক মিথস্ক্রিয়া ফলাফল, আর একটি হরমোন আছে যে এর প্রধান চরিত্র, এনিয়ে আমরা এখনও কথা বলিনি।

আপনি সম্ভবত আপনার জীবনের কোনো ক্ষেত্রে এটি নিয়ে শুনেছেন, বিশেষ করে মারাত্মক খেলাধুলার ক্ষেত্রে। আপনি ঠিক অনুমান করেছেন, এর নাম অ্যাড্রেনালিন।


কর্টিসলের মতো এটিও অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি দ্বারা উৎপাদিত হয় এবং চাপযুক্ত পরিস্থিতির সাথে যুক্ত। এটি শরীরের ‘লড়ুন বা পালান’ ভূমিকার জন্য পরিচিত, যা মূলত হুমকির মুখে একটি শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়া।

ক্ষুধার্ত অবস্থায় অ্যাড্রেনালিন এবং কর্টিসল উভয়ই একসাথে আমাদের মেজাজকে প্রভাবিত করে এবং আমাদের আরও রাগান্বিত বা বিরক্ত করে তোলে। এর একটি বিবর্তনীয় ব্যাখ্যা আছে বলে মনে করা হয়: খাদ্য ঘাটতি থেকে বাঁচার জন্য- এবং এভাবে সেই সব সম্পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাথে প্রতিযোগিতা করার জন্য– সেই সময়কার শিকারি বা খাবার সংগ্রহকারীদের জন্য আক্রমণাত্মক হওয়া সুবিধাজনক ছিল।

আজকাল যদিও আমরা আর খাবারের জন্য একইভাবে প্রতিযোগিতা করি না, তবে ক্ষুধা লাগলে শরীর কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায় তা জানা থাকলে আবেগকে সামলানো সহজ হতে পারে।

আপনি যদি রাগান্বিত বা বিরক্ত বোধ করতে শুরু করেন তবে মনে রাখবেন- এটি না খেয়ে থাকার কারণে হতে পারে। নিজের সঙ্গে স্বাস্থ্যকর খাবার রাখা কেবল শক্তিই জোগাবে না, এটি আপনাকে আরও ভারসাম্যপূর্ণ মেজাজে রাখতেও সহায়তা করবে।

এই নিবন্ধটি দ্য কনভার্সেসনে প্রকাশিত বায়োমেডিকেল রিসার্চ ইনস্টিটিউট অফ মালাগা’র (আইবিআইএমে) একজন গবেষক লিলিয়া কাজান্তসেভা লেখা। বিবিসি বাংলা নিবন্ধটি অনুবাদ করেছে।


 


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: