সারজিস-হাসনাতকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার পর রংপুরে উত্তেজনা
রংপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও মহানগর সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ককে রংপুরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মেডিকেল কলেজ শাখা সোমবার মধ্যরাতে বিক্ষোভ মিছিল করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা ওই জাপা নেতার বক্তব্য প্রত্যাহার ও প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছে।
এ ঘটনার জেরে আবারও মঙ্গলবার প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন
অনুষ্ঠিত হয়েছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে। দুই সমন্বয়কের পক্ষে
মানববন্ধন করে জাপা নেতার বক্তব্য প্রত্যাহার ও ক্ষমা প্রার্থনার দাবি
জানিয়ে হুশিয়ারি দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ।
এ
ঘটনাকে কেন্দ্র করে হুমকি ও পাল্টা হুমকিতে এখন রংপুরে মুখোমুখি অবস্থান
করছেন দু’পক্ষ। যে কোন সময় তা সংঘাতে রূপ নিতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
তার
এই বক্তব্যের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ ক্ষুব্ধ হয়ে
ওঠেন। সোমবার মধ্যরাতে রংপুর নগরীর মেডিকেল মোড় থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র
আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এসময় তারা মিছিল থেকে
বিভিন্ন স্লোগান দেন। মিছিলটি নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে প্রতিবাদ
সমাবেশে বক্তব্য দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা বলেন, ছাত্র-জনতার মুক্তির লড়াই চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান। অসংখ্য মৃত্যু আর ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই আন্দোলনে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যাওয়া সবার মুক্তির প্লাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহরা চব্বিশ বিপ্লবের নায়ক, তাদের অবাঞ্ছিত করার এখতিয়ার জাতীয় পার্টির নেই। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের নিয়ে রংপুরে জাতীয় পার্টির বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তারা। প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন-বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুরের প্রতিনিধি ইমরান আহমেদ, মোতাওয়াক্কীল বিল্লাহ শাহ্ ফকির, ইমতিয়াজ আহমেদ প্রমুখ।
এ ঘটনার
রেশ না কাটতেই মঙ্গলবার আবারও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বেগম রোকেয়া
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র
আন্দোলনের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
ওই সমাবেশে ছাত্র
নেতৃবৃন্দ বলেন ‘আবু সাইদ-মুগ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ, আমার সোনার বাংলায়
চাটুকারদের ঠাই নাই, স্বৈরাচারী ভাগছে দালালেরা জাগছে, যার নাই মেরুদণ্ড সে
আবার দেখায় দম্ভ, স্বৈরাচার গুলি নাই তুই আবার কে ভাই, আবু সাইদের শহরে
দালালের ঠাই নাই, আর কতদিন চাটাচাটি করবি তোরা জাতীয় পার্টি’ শ্লোগান
গুলোকে সামনে রেখে জাতীয় পার্টির বক্তব্যের প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি
পালন আন্দোলনকারীরা। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের
নেতা আশিকুর রহমান, জীবন প্রধান অহি প্রমুখ।
উল্লেখ সোমবার
রংপুর জাতীয় পার্টির সেন্ট্রাল রোড কার্যালয়ে কর্মী সমাবেশ পার্টির
চেয়ারম্যান ও সংসদে সাবেক বিরোধী দলীয় নেতা জিএম কাদেরের উপস্থিতিতে জাপা
নেতা বলেন, ‘সারজিস আলম আর হাসনাত আব্দুল্লাহ জাতীয় পার্টিকে নিয়ে যে ঘোষণা
দিয়েছে এরপর তাদের আর রংপুরে আসতে দেয়া হবে না। তাদেও অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা
হলো।
তার পরেও তারা যদি ফেসবুকে জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে কোন বিরূপ ম্যাসেজ দেন, তাহলে জাতীয় পার্টির সকল নেতা কর্মী সমর্থক যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে রংপুরে পার্টি অফিসে চলে আসবেন। আমরা তাদের দেখিয়ে দিতে চাই রংপুরে জাতীয় পার্টির শক্তি কতটুকু। আমাদের আন্দোলন নস্যাৎ করার জন্য পুলিশ র্যাব বিজিবি ঠেকাতে আসে তাহলে তাদের সুপারসিট করে আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে না পারি তাহলে নাকে খত দিয়ে জাতীয় পার্টি থেকে চলে যাবো।
তিনি
জাতীয় পার্টির নেতা কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন আপনারা কান খুলে শুনেন জেলা ও
মহানগর জাতীয় পার্টি থেকে যে ঘোষণা আসবে সারজিস আলম আর হাসনাত আব্দুল্লাহ
কোন প্রোগ্রাম রংপুরের মাটিতে হতে দেয়া হবে না। একই সাথে প্রশাসন ও আর আইন
শৃঙ্খলা বাহিনীর যারা আছেন তারাও কান খুলে শুনে রাখেন এর পরে রংপুরে কোন
রাজনৈতিক সংলাপে যদি জাতীয় পার্টিকে আমন্ত্রণ করা না হলে সে সংলাপ আমরা
করতে দেবো না। তিনি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন,
সারজিদ আর হাসনাতের মতো দু’জন টোকাইকে প্রশ্রয় দেন তাহলে বোকার স্বর্গে বাস
করছেন।
তিনি বলেন আমরা জাতীয় পার্টি থেকে সংস্কার করার জন্য ড.
ইউনূস মহোদয়কে আরো সময় দিতে চাই। আমরা সব সময় বলেছি সংস্কার করতে যত সময়
লাগে অংশগ্রহণ মূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সে সময় আমরা সব সময় দিতে
চাই।
0 coment rios: